বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৩

বিমানবাহী জাহাজের ইতিহাসঃ

ক্রইজার ইউএসএস ব্রিমিংহামের ডেক থেকে প্রথম উড্ডয়ন করে একটি প্লেন। ইতিহাসে এটাই প্রথম
কোনো প্লেন জাহাজ থেকে ওড়ার ঘটনা। আর জাহাজে প্রথম প্লেন ল্যান্ডিংয়ের ঘটনা ঘটে ১৯১১ সালে। ১৯১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানি রাজকীয় নৌবহর থেকে জার্মান নৌবহরের ওপর প্রথম বিমানবাহী জাহাজ থেকে আক্রমণ করা হয়। ওই জাহাজের নাম ‘ওয়াকামিয়া’।

১৯১৮ সালে পৃথিবীর প্রথম সত্যিকারের বিমানবাহী জাহাজের জন্ম হয় যা থেকে প্লেনের উড্ডয়ন অবতরণ সবই সম্ভব হতো। এর নাম ‘এইচএমএস আর্গুস’। এটি একটি ব্রিটিশ জাহাজ। গত শতাব্দীর বিশের দশকে তরতর করে বিমানবাহী জাহাজের অগ্রগতি সাধিত হতে লাগল।

‘হোসো’ (১৯২২) ‘এইচএমএস হার্মিস’ (১৯২৪) ‘বিয়ার্ন’ (১৯২৭) এই সময়ের জাহাজগুলোকে কিন্তু বিমানবাহী হিসেবে ডিজাইন করা হয়নি। এগুলোর সবই ছিল হয় ব্যাটল ক্রুইজার, কার্গো শিপ না হয় ব্যাটল শিপ। এগুলোকে একটু মডিফাই করে বিমানবাহী জাহাজে রূপান্তর করা হয়।

১৯২২ সালে ওয়াশিংটন ন্যাভাল ট্রিটি অনুসারে ইউএস আর ইউকে ১৩৫০০০ টনের বিমানবাহী জাহাজের অনুমোদন দেয়। এর পরেই আবির্ভূত হয় 'লেক্সিংটন
ক্লাশ ন্যাভাল ক্যারিয়ার' (১৯২৭)।

১৯২০ সালের পর বিভিন্ন দেশের নেভী বিমানবাহী রণপোত নির্মাণের আদেশ দেয় যা দ্বিতীয়
বিশ্বযুদ্বে ইউএস, ইউকে আর জাপানের নৌবাহিনীর মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের সময় বিভিন্ন টাইপের বিমানবাহী জাহাজের আবির্ভাব ঘটে, এস্কর্ট বিমানবাহী জাহাজ যেমন ‘ইউএসএস বোগি’। এর পরেই আসে লাইট এয়ার ক্র্যাফট ক্যারিয়ার। আসলে লাইট এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার আর এস্কর্ট বিমানবাহী জাহাজের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য ছিল না। তবে লাইট এয়ার ক্র্যাফট ক্যারিয়ারের আয়তন আর স্পিড কিছুটা বেশি ছিল। এ পর্যায়ে আমরা ‘ইউএসএস ইন্ডিপেন্ডেন্ট’-এর নাম মনে করতে পারি। ইউকে এ পর্যায়ে এসে লাইট ফ্লিট ক্যারিয়ার তৈরি করে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত লাইট ফ্লিট ক্যারিয়ারই ছিল সবচেয়ে আধুনিক।

আগের কালের ব্যাটল শিপ যে ভূমিকা রাখত, বর্তমানের ক্যাপিটাল শিপ একই ভূমিকা রাখে। এই সুপার ক্যারিয়ারগুলো ৭৫০০০ টনের বেশি বহন
ক্ষমতাসম্পন্ন আর নিউক্লিয়ার পাওয়ার চালিত।

‘ইউএসএস টরা’, ‘এইচ এমএস ওসেন’ এয়ার ক্র্যাফট ক্যারিয়ার হলেও এগুলো আসলে হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার কিন্তু একই
সঙ্গে ছোট যুদ্ধ বিমান বহনেও সক্ষম।

বিমানবাহী জাহাজ যুদ্ধবিমান দিয়ে আক্রমণে সক্ষম হলেও এর নিজের প্রতিরক্ষা কিন্তু খুব একটা ভালো না। যার কারণে প্রতিটি এয়ার ক্র্যাফট ক্যারিয়ারের সঙ্গে সাপোর্টিং যুদ্ধ জাহাজ হিসেবে সাবমেরিন, ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট ইত্যাদি থাকে। এদের এক সঙ্গে ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ বলা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে নেভাল ট্রিটি দ্বারা এয়ার ক্র্যাফট ক্যারিয়ারের আকার-আকৃতি সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এর আকার আকৃতিগত সীমাবদ্ধতা উঠে গেছে, বর্তমানে ইউএসএ নিমিৎজ
ক্লাসের বিমানবাহী রণপোত ব্যবহার করে। যেগুলো আকারে সব ৭৫০০০ টনের ওপরে,
নিউক্লিয়ার শক্তিচালিত আর কম-বেশি প্রায় সব জাহাজে ৯০টির মতো বিমান থাকে।

চলুন দেখি কার হাতে কয়টা বিমানবাহী জাহাজ আছেঃ

আমেরিকা : আমেরিকার হাতে ১০টি নিমিৎজ ক্লাস বিমানবাহী জাহাজ আছে, যেগুলো ১০১০০০ টন বহন ক্ষমতাসম্পন্ন। এগুলো দুটি নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে চলে। ১৯৭৫ সালে প্রথম নিমিৎজ ক্লাস জাহাজ কমিশন লাভ করে।

চীন : ৫৭০০০ টনের সোভিয়েত কুৎনেসভ ক্লাস ক্যারিয়ার নাম ছিল ভারিয়াগ পরে চীন কিনে নিয়ে এর নাম দেয় লিয়োনিং। এটি এখনো যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত না। নভেম্বর ২৫, ২০১২ এটা থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিমান উড্ডয়ন করে। এটা পূর্ণ যুদ্ধযাত্রা করতে ২০১৬ সাল লাগবে। এখন ও যেহেতু পরীক্ষামূলক যাত্রায়
আছে তাই এর বিমান বহর
সম্বন্ধে ঠিকমতো জানা যায় নাই।
তবে এতে ৩০টি বিমান ও ২৪টি হেলিকপ্টার থাকতে পারবে।

ফ্রান্স : ৪২০০০ টনের নিউক্লিয়ার চালিত চার্লিস দি গুয়ালি বিমানবাহী জাহাজ ২০০১ সালে ফরাসি নেভীতে যোগ দেয়।২৮-৪০টা বিমান ও হেলিকপ্টারের সমন্বয়ে এটা গঠিত। আফগানিস্তানে আক্রমণের সময় এ বিমানবাহী জাহাজটি বড় ভূমিকা রাখে।

ইতালি : ১৪০০০ টনের 'ইতালিয়ান স্টোভল' ১৯৮৫ সালে ইতালি নেভীতে যোগ দেয়। ৬৩০ জন ক্রু আর ১০০ জন বৈমানিক নিয়ে এটি সাগরে আছে।
সর্বোচ্চ বিশটি বিমান বহন ক্ষমতাসম্পন্ন।

থাইল্যান্ড : ১১৪০০ টনের স্টোভল থাইল্যান্ড নেভীতে যোগ দেয় ১৯৯৭ সালে। বর্তমানে বাজেটের অভাবে এটি এক রকম পরিত্যক্ত হয়ে আছে। থাই রাজার
প্রমোদতরী হিসেবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার কখনো কখনো রিলিফ কাজে অংশগ্রহণ করে।

ফোরামেঃ www.cybergoyenda.tk/forum2_theme_110791169.xhtml?tema=8





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন