শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৩

"যুদ্ধ দানব ট্যাঙ্ক" (( #3য়_খন্ড))

আধুনিক যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে "ট্যাঙ্ক" একটি মারাত্নক অস্র,আর এই ট্যাঙ্ক এর জন্ম কাহিনী নিয়ে শুরু করলাম ধারাবাহিক পোস্ট,তবে লহ্ম্যণীয় যে,লেখাটি আমার নয়,এর সোর্স কি তাও আমার অজানা।কেউ জানলে কমেন্টে বলবেন,আশা করি পরবর্তীতে সংযুক্ত করতে পারব।

১৯৪১
------- 
১৯৪১ সনের মাঝামঝি জার্মনী সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমন করলো। সে এক ইলাহী ব্যাপার। হিটলার বললেন " সমস্ত দুনিয়া রুদ্ধ্বশ্বাসে আমাদের দেখছে'। ঐতিহাসিক এ জে পি টেইলর বল্লেন " coming of the world war '। এবারে সত্যি বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হল। শুরু হল যেন সুনামির বন্যা। তাসের প্রাসাদের মতন ভেঙে পড়ছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা। বছর শেষ হবার আগেই মস্কোর কাছাকাছি পৌছে গেলো নাৎসি বাহিনী।

তবু ঐ একতরফা লড়াইতে ছন্দপতন একটাই। সেটি জার্মান প্যনজার থ্রি বনাম রাশান টি ৩৪'র ট্যাংকের তুলনা। রাশিয়ান ট্যাংক টি ৩৪ যে বিশ্ব যুদ্ধের সেরা ট্যাংক সে নিয়ে আদৌ কোনো মতবিরোধ নেই। জার্মান সেনারাও প্রথম মোকাবিলায় টি ৩৪'র মুখোমুখি হয়েই বিপদ ঘন্টি বাজিয়ে দিলেন। তাদের প্যানজার থ্রি আদৌ টি ৩৪'র সমকক্ষ নয়।

বাইশ টনের প্যানজার থ্রিতে ছিলো ৩৭মিমি কামান আর দুটো মেশিন গান। বেশ সাদামাটা ডিজাইন। আর টি ৩৪ ছিলো ২৬ টন ওজনের। ৭৬ মিমির কামান আর ভারী মেশিনগান । ১৯৩৯ সালে কিছুটা ব্রিটিশ ক্রিস্টি কোম্পানীর নকশা নিয়ে টি ৩৪ ট্যাংক তৈরী হয়েছিলো । জার্মান আক্রমনের প্রথম দিকে রাশিয়া খুব কমই টি ৩৪ ব্যবহার করেছিলো। কেন না ওটা ছিলো সোভিয়েত রাশিয়ার টপ সিক্রেট , ট্রাম্প কার্ড। কিন্তু ঐ অল্প সংখ্যক টি ৩৪'র মোকাবিলা করতে গিয়ে নাৎসী বাহিনী নাস্তানাবুদ। তারা হেড কোয়ার্টারে খবর দিলেন শিগগিরি টি ৩৪'র মতন ট্যাংক বানিয়ে দাও আমাদের ।

গুডেরিয়ান তার " প্যানজার লীডার ' বইতে লিখলেন ... " টি ৩৪'র মুখোমুখি হয়ে আমরা বুঝতে পারলাম দ্রুত সুনিশ্চিত বিজয় আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় " । টি ৩৪ ছিলো ট্যাংকের ডিজাইনে অন্তত: পাঁচ কদম এগিয়ে। প্রথমত: অন্যান্য সমসাময়িক ট্যাংকের বাক্স টাইপের চেহারার বদলে টি ৩৪'র টারেট ছিল ঢালু। তাই বিপক্ষের গোলা অনেক সময়েই ঠিকরে যেতো । ছিল খুব দ্রুত গতির (৫০ মাইলের উপর) আর তার কামান ছিলো সব থেকে দুর পাল্লার। ট্যাংকের লোহার চাকা ছিল খুব চওড়া, তাই স্নো বা কাদায় কম অসুবিধেয় পড়ত। ইঞ্জিন ছিলো ডিজেলের। তাই পেট্রল ট্যাংকের মতন অতো ইনফ্লেমেবল ছিল না। আর মেশিন হিসেবে ছিল খুব নির্ভরযোগ্য। শক্তপোক্ত। শুধু ডিজাইন নয়, টি ৩৪'র ম্যানুফ্যকচারিং প্রসেস ছিলো অতি আধুনিক। তাই স্তালিন যখন ট্যাংক ফ্যাকটরী গুলিকে সাইবেরিয়া ও অন্যান্য প্রত্যন্ত প্রদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন , সেখানে খুব অল্প সময়েই জোরদার একশোভাগ প্রডাকশন শুরু করা গিয়েছিল।

এই বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তর আফ্রিকায় পৌছে গেলেন ট্যাংক যুদ্ধের জাদুগর রোমেল। সে সময়কার বৃটিশ রণকৌশলকে সম্পুর্ন উপেক্ষা করে রোমেল চালু করলেন তাঁর দ্রুত গতির লড়াই - ট্যাংক যার প্রধান হাতিয়ার।

স্মৃতিচারনায় রোমেল একাধিকবার উল্লেখ করেছেন যে ব্রিটিশ ট্যাংকের obsolete design and technology । তখন প্রধান ব্রিটীশ ট্যাংক ছিলো মাটিলডা। নিতান্ত থপথপে আর বেশ ভারী। ছোটো সাইজের কামান।ব্রিটিশ থিওরী ছিলো যে মাটিলডার পুরু লোহার চাদর কোনো জার্মন ট্যাংক ভেদ করতে পারবে না।

জার্মানির হাতে ছিলো অতি চমৎকার বিমান বিধ্বংসী ৮৮মিমি কামান। রোমেল সেই কামানগুলিকে আকাশমুখী না করে ট্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করলেন আর মাটিলডার কবরখানায় মরুবিজয়ের কেতন রোমেলের হাতেই রইল। ব্রিটিশদের হাতেও ছিল তাদের চমৎকার ৩.৭ ইঞ্চি ব্যাসের বিমান বিধ্বংসী কামান। কিন্তু তারা কখনই সেগুলিকে ট্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন নি। চোখের সামনে জলজ্যান্ত উদাহরন থাকতেও এরকম চিন্তা শক্তির দৈন্য ছিলো নিতান্ত ট্র্যাজিক। বছরের শেষের দিকে ব্রিটিশ বহিনী ক্রুসেডার নামের দ্রুত গতির (৪০ মাইল ঘন্টায়) ট্যাংক নামালো কিন্তু সেই ট্যাংকের কামান এতই কমজোরী ছিলো যে খুব সুবিধে হলো না।

১৯৪১ সালে আফ্রিকায় রোমেলের একটানা বিজয় অভিযান। অবহেলে যুদ্ধ জিতছেন তিনি। " এই বিজয় ,আমাদের উন্নততর ট্যাংকের জন্যই সম্ভব হয়েছিল' স্বীকার করলেন রোমেল। প্যানজার থ্রি আর ফোর মডেলের কাছে দাঁড়াতে পারে নি ব্রিটীশ মাটিলডা ও ক্রুসেডার ট্যাংক। 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন